শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কঠোর বিধিনিষেধে গড়িমসি!

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগামী চলছে। গত তিন দিন ধরে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গত দুই দিন শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের বেশি। শনিবার (৮ জানুয়ারি) শনাক্তের হার ছিল পাঁচ দশমিক ৭৯ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে দেশে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে সংক্রমণ ফের বাড়তে পারে। এ দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনা সংক্রমণ চারশ’ গুণ বেড়েছে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। এ সময় মাস্ক পরা জরুরি; কিন্তু সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে মাস্ক পরায় অনীহা দেখা গেছে।

এদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও একদিনে শনাক্ত এক লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে, যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বাধিক। রয়টার্স জানিয়েছে, দেশটিতে গত বছরের মে মাসের পর একদিনে এত বেশি সংখ্যক রোগী আর শনাক্ত হয়নি। ভারতে ডেল্টার সংক্রমণে যেভাবে হু হু করে রোগী বেড়েছিল, ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে আবারও একই গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে।

ভারত থেকেই গত বছরের মাঝামাঝিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সীমান্তবর্তী জেলা হয়ে প্রবেশের পর সেটা পুরোদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আর ওই সময়ে ডেল্টার তাণ্ডবে দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল, একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছিল। সে সময় সরকার কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউন দিতে বাধ্য হয়। থমকে যায় সবকিছু।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই করোনার অতিসংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছেন ২১ জনের দেহে। তারা সবাই ঢাকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রণের ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন হয়েছে ঢাকায় এবং সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে সারাদেশে ডেল্টার মতো ওমিক্রনও ছড়িয়ে পরতে সময় নেবে না। আর এ আশঙ্কা থেকে গত ৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয় এবং সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, সিদ্ধান্তগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, মাস্ক না পরে ঘরের বাইরে গেলে জরিমানা, গণপরিহনে নির্ধারিত আসনের চেয়ে কম যাত্রী বহন, দোকানপাট-বাস-ট্রেন-মসজিদ সর্বপরি সবজায়গায় মাস্ক পরা; না পরলে তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে বলে সে দিন জাহিদ মালেক জানান। এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সংখ্যা যেন সীমিত করা হয়; টিকার সনদ ছাড়া রেস্টুরেন্টে যেন খেতে যাওয়া না হয়, কেউ যদি যায় তাহলে সেই রেস্টুরেন্টকেও জরিমানা করা হবে-এমন সব শর্ত রেখে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয় বলা হয়।

এরপর স্বাস্থ্য সচিব মো. লোকমান হোসেন মিঞা গত ৫ জানুয়ারি জানান, ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন যেকোনও সময় হতে পারে। বিধিনিষেধ নিয়ে প্রজ্ঞাপন হয়তো আজ-কালের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।’ কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপন শনিবারও জারি হয়নি।

এদিকে, ৭ জানুয়ারি ওমিক্রণের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে শঙ্কা প্রকাশ করে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়সহ সব ধরনের জনসমাগম বন্ধের সুপারিশ করেছে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি। নিজেদের সুপারিশের পাশাপাশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেয় কমিটি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ২০২০ সালে করোনার প্রকোপের শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে দেরি করে। তখন দেশের বাইরে থেকে আসা রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যেটা ছিল দেশজুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের মতো দেশে হোম আইসোলেশন বা হোম কোয়ারেন্টিন কার্যকর হতে পারে না। সেইসঙ্গে গতবছর ডেল্টার সংক্রমণ ঠেকাতেও সরকার পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করেছে। এ কারণে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে পুরো দেশে ডেল্টা ছড়িয়েছে। অথচ তখন যদি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সঠিক ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত তাহলে লকডাউনের মতো কঠোর বিধিনিষেধের কবলে দেশকে পড়তে হতো না।

এবারও সেই আশঙ্কার কথা বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ঢাকায় ইতোমধ্যে ওমিক্রনের ক্লাস্টার টান্সমিশন হয়েছে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থ না নেওয়া হলে সারাদেশে আবার এটা ছড়িয়ে পড়বে। আর ডেল্টার চেয়ে তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি সংক্রমণশীল এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে ফেরত আসা কঠিন হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন নিয়ে এত জরুরিভাবে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করলো, বলা হলো প্রজ্ঞাপন আসবে; কিন্তু সেটা দিতে যদি দেরি হয় এবং সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন যদি করা না যায়, তাহলে দেশ ফের লকডাউনে যেতে বাধ্য হবে। কিন্তু আমাদের মতো দেশে লকডাউন দিলে খেটে খাওয়া মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধের মতো পরিস্থিতিতে যেতে না চাইলে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত এবং জাতীয় কমিটির সুপারিশ দ্রুত আমলে নিয়ে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা উচিত।

জনস্বাস্থ্যবিদ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘সংক্রমণের হার বাড়ছে। ওমিক্রন দ্রুত ছড়াচ্ছে। আমাদের সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ দেওয়া উচিত। প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা কেবল আশার বাণীই শুনছি।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেবল এই কথাগুলো বলেই যাচ্ছেন, কিন্তু কাজের কাজতো কিছু হচ্ছে। করোনার শুরুতে ডেল্টার সময়ে ব্যবস্থা নিতে দেরি করার ফল আমরা দেখেছি। এবারও একই রকম দেখা যাচ্ছে। ব্যবস্থা নিতে দেরি হওয়ায় লকডাউন দিতে হয়েছে, আর এবার যদি এখনি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে সামনে কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হবে।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। অথচ নির্বাচনসহ সব ধরনের গণজমায়েত চলছে।’ তিনি বলেন, ‘ডেল্টার সময়ে আমরা ছড়ানোর পর ব্যবস্থা নিয়েছি। এবারতো ওমিক্রন ধরা পড়লো, সেভাবে এখনও ছড়ায়নি; তাই আমাদের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এখানে কোনও দ্বিধা থাকা উচিত নয়।’

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, আগাম ব্যবস্থা নিলে যে উপকারটা পাওয়া যায়, সেটি আমরা ২০২০ সালে দেখেছি। সে বছর ২৬ মার্চে সবকিছু বন্ধ করা হয়েছিল। ফলে বাংলাদেশে করোনার ঢেউ সেভাবে আছড়ে পড়েনি, ধীরে ধীরে বেড়েছে।’ এখন যদি সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে তার উপকার আমরা অবশ্যই পাবো জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে, বাংলাদেশে ওমিক্রণের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (সামাজিক সংক্রমণ) হবে না।’

আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা বলেন, ‘ডেল্টার সময়ের মতো আমরা ভুল পথে পা দিতে যাচ্ছি কিনা—সেটাই হচ্ছে কথা। ওমিক্রন যদি এসেই যায় তাহলে কিন্তু আমরা সামলাতে পারবো না। লকডাউন যেন না দিতে হয়, ওই কঠিন পরিস্থিতিতে যেন মানুষকে ফের যেতে না হয়, সে জন্য এখনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বাণিজ্য মেলা, শিল্পকলায় পিঠামেলা, ধর্মীয় সমাবেশ, রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, গণপরিবহন সবাইকে বলা দরকার, যদি দীর্ঘদিন কাজ চালিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়, লকডাউন যদি কেউ না চান; তাহলে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে লকডাউন দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’

ভয়েস/আআ/সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION